শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ০২:২৮ পূর্বাহ্ন

আপডেট
মেয়ের জোড়া গোল বিদ্যুৎ না থাকায় দেখতে পারেননি মা নমিতা রানী

মেয়ের জোড়া গোল বিদ্যুৎ না থাকায় দেখতে পারেননি মা নমিতা রানী

খায়রুল খন্দকার টাঙ্গাইল:
সাফ নারী ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে স্বাগতিক নেপালকে ৩-১ গোলে হারিয়ে শিরোপা জিতেছে বাংলাদেশ নারী দল। এই ম্যাচে জোড়া গোল করেন টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার পাথালিয়ায় এলাকায় মেয়ে কৃষ্ণা রানী সরকার। কিন্তু বিদ্যুৎ না থাকায় মেয়ের জোড়া গোল দেখতে পারেননি মা নমিতা রানী সরকার।
তবে কৃষ্ণার বাবা বাসুদেব সরকার পাশের এক গ্রামে গিয়ে ম্যাচের খেলা উপভোগ করেন। অন্যদিকে বোন যেন ভালো খেলে সেজন্য উপবাস করেছিল তার ভাই পলাশ।
মেয়েদের ঐতিহাসিক জয়ে আনন্দে ভাসছে দেশের মানুষ। ফাইনালে নেপালের মাটিতে তাদের হারিয়ে মেয়েদের এ সাফল্য খুলে দিয়েছে ফুটবলের নতুন দুয়ার। ফাইনালের ৩ গোলের মধ্যে দুটিই করেন কৃষ্ণা। সেই আনন্দ ছুঁয়ে গেছে কৃষ্ণার বাড়ি উপজেলার পাথালিয়ায় এলাকায়।
কৃষ্ণার ভাই পলাশ বলেন, দিদির খেলার জন্য সারা দিন উপবাসের ব্রত করেছিলাম। জয়ের পর দিদির সঙ্গে কথা বলে তারপর খেয়েছি। দিদি টেনশনে ছিল। আমি তাকে সকালে বলেছি, তুমি টেনশন না করে ভগবানের নাম নিয়ে তোমার সেরাটা খেলার চেষ্টা করো।
তিনি আরও বলেন, আমরাও উদ্বিগ্ন ছিলাম ফাইনাল নিয়ে। ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেছি যেন বাংলাদেশ এই শিরোপা জেতে। আর আমার দিদি যেন ভালো খেলতে পারে। ঈশ্বর আমার দুটি কথাই রেখেছেন। এই আনন্দ কাউকে বলে বুঝাতে পারব না।
কৃষ্ণার মা নমিতা রানী সরকার আফসোস করে বলেন, বিদ্যুৎ না থাকায় খেলা দেখতে পারিনি। খেলা শেষ হওয়ার পর প্রতিবেশীরা বাড়িতে এসে জয়ের কথা জানায়। আমার ছেলেও মোবাইল ফোনে বলেছে। আমি কৃষ্ণাসহ দলের সবার জন্য দেশবাসীর কাছে আশীর্বাদ চাই।
তিনি আরও বলেন, আমার মেয়ে যখন নতুন নতুন খেলতে যেত, তখন আমাদের অনেক কটুকথা সহ্য করতে হয়েছে। তবে এখন মেয়ের সাফল্যে ভালো লাগে। যারা একসময় সমালোচনা করত তারাই এখন প্রশংসা করে। সমাজ বদলাচ্ছে, সঙ্গে সঙ্গে মানুষের মনোভাবও। ক্রীড়াক্ষেত্রে মেয়েদের সাফল্যও মানুষ ভীষণ উপভোগ করে এখন।
কৃষ্ণার বাবা বাসুদেব সরকার বলেন, বিদ্যুৎ না থাকায় আমি পাশের গ্রামে গিয়ে খেলা দেখে দারুণ খুশি। মেয়ের খেলায় খুব খুশি। এলাকার মানুষও খুব উপভোগ করেছে। অনেকেই আনন্দে শুভেচ্ছা জানাতে আসছে। কৃষ্ণা যেন দেশের জন্য আরও গৌরব বয়ে আনে সেই আশীর্বাদ চাই।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পারভেজ মল্লিক কৃষ্ণাকে সংবর্ধনা দেওয়ার কথা জানিয়ে বলেছেন, কৃষ্ণা শুধু গোপালপুর কিংবা টাঙ্গাইল জেলার নয়, সারা দেশের গর্ব। বঙ্গমাতা ফুটবল টুর্নামেন্টের মাধ্যমে তার উত্থান শুরু। দেশে ফেরার পর আমরা তাকে বড় করে একটি সংবর্ধনা দেব। কৃষ্ণার মাকে কিছুদিন আগে রত্নগর্ভা সম্মাননা দিয়েছি।
প্রসঙ্গত, সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) নেপালের কাঠমান্ডুর দশরথ রঙ্গশালা স্টেডিয়ামে ৩-১ ব্যবধানে জিতে বাংলাদেশকে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা এনে দেয় মেয়েরা। দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট পরে বাংলাদেশ ভাসছে আনন্দের জোয়ারে। সেখানে কৃষ্ণা রাণী সরকারের জোড়া গোলে হিমালয় কন্যাদের হারিয়েছে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল।

শেয়ার করুন

Comments are closed.




দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ © All rights reserved © 2024 Protidiner Kagoj |